সালাতুল তাসবিহ নামাজের নিয়ম

সালাতুল তাসবিহ নামাজের নিয়ম
সালাতুল তাসবিহ নামাজের নিয়ম বা নিয়ত পড়ার আগে আমাদের আগে বুঝতে হবে সালাতুল তাসবিহ নামাজটা কি আর এই সালাতুল তাসবিহ নামাজের ফজিলত কেমন? সালাতুল তাসবিহ নামাজ হচ্ছে এমন একটি নামাজ যা ব্যক্তির জীবনে আগের, পরের, পুরাতন, নতুন, সবধরনের গোনাহ, ইচ্ছাকৃত কিংবা অনিচ্ছাকৃত গোনাহ, সগিরা ও কবিরা গোনাহ ও গোপন ও প্রকাশ্য গোনাহ মাফ করে দেয়ার নামাজকে বুঝায়।

সালাতুল তাসবিহ নামাজের ফজিলত:

এই সালাতুল তাসবিহ নামাজ যে পড়বে তাকে আল্লাহ পূর্বের গুনাহ বা পাপ মোচন হয় এবং অসীম সওয়ার পাওয়া দিবেন, যা উপরে বর্ণিত হয়েছে। এবার একটু ভাবুন-তো মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন কতটা মহান, কতটা দয়াবান কতটা অসীম। 


তিনি কতটা জ্ঞানী তা কেবল এর উত্তর তিনি নিজেই দিতে পারবেন। বর্তমানে এমন কোনো ব্যক্তি পাবে না যে কোনো না কোনো গুনাহ্ কাজে লিপ্ত ছিলো না। আর এই গুনাহ থেকে মুক্তি লাভের জন্য তিনি আমাদের এই সালাতুল তাসবিহ নামাজটার কথা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর মাধ্যমে আমাদের কাছে জানিয়েছেন। সে জন্য বলো, আলহামদুল্লিহ্।

আরো পড়ুন: হালকি নফল নামাজ কি?

সালাতুল তাসবিহ নামাজের হাদিস:

হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, স্বীয় চাচা হযরত আব্বাস রাদিআল্লাহু আনহুকে এই নামায শিক্ষা দিয়েছিলেন এবং বলেছিলেন 

‘হে আব্বাস! হে চাচাজান! আমি কি আপনাকে দেব না? আমি কি আপনাকে দান করব না? আমি কি আপনাকে সংবাদ দেব না? এই নামায পড়লে আল্লাহ আপনার আখেরের সগীরা কবীরা জানা অজানা সকল গুনাহ অর্থাৎ জীবনে আগের, পরের, পুরাতন, নতুন, সবধরনের গোনাহ,  ইচ্ছাকৃত কিংবা অনিচ্ছাকৃত গোনাহ, সগিরা ও কবিরা গোনাহ ও গোপন ও প্রকাশ্য গোনাহ মাফ করে দিবেন।

আপনি যদি পারেন, তবে দৈনিক একবার করে হলেও এই নামায পড়বেন। যদি দৈনিক পড়তে না পারেন, তবে সপ্তাহে একবার হলেও পড়বেন। যদি সপ্তাহে তা-ও না পারেন, তবে মাসে একবার পড়বেন। যদি মাসে  তা-ও না পারেন, তবে বছরে একবার হলেও পড়বেন। যদি এটাও না পারেন, তবে অন্ত:পক্ষে সারা জীবনে একবার হলেও এই নামায পড়বেন।’

সালাতুল তাসবিহ নামাজ এর নিয়ম:

এই সালাতুল তাসবিহ চার রাকাতের নামাজ। প্রতি রাকাতে সূরা ফাতিহাটি পর, যে কোন সূরা পাঠ করবেন। তবে এই নামাযে জন্য তোমাকে  ‘সুবহানাল্লাহি ওয়াল হামদু লিল্লাহি ওয়া লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার’-এ তাসবিহটি ৭৫ বার পড়তে হবে।

অর্থাৎ তোমাকে এই  প্রতি রাকাতে ৭৫ বার ‘সুবহানাল্লাহি ওয়াল হামদু লিল্লাহি ওয়া লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার’-এ তাসবিহটি ৭৫ বার পড়তে হবে। অতএব, এই চার রাকাতে মোট ৩০০ বার তাসবীহ পড়তে হবে। 


এই সালাতুল তাসবিহ নামাজের নিয়মটি আরোও সহজভাবে বর্ণনা করা হলো:

  • প্রথম রাকাতে সানা পাঠ করার পর সূরা ফাতেহা পড়ার আগে তাসবীহ (সুবহানাল্লাহি ওয়াল হামদু লিল্লাহি ওয়া লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার) টি ১৫ বার পাঠ করতে হবে।
  •  তারপর সূরা ফাতিহা পাঠ করার পর যে কোনো সূরা মিলিয়ে পড়ার পড় তোমাকে আবার এই তাসবীহ (সুবহানাল্লাহি ওয়াল হামদু লিল্লাহি ওয়া লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার) টি ১০ বার পাঠ করতে হবে।
  • তারপর রুকুতে যাবে রুকুর তাসবীহ সুবহানা রাব্বি আল-আজিম পড়ে পুনরায় এই তাসবীহ (সুবহানাল্লাহি ওয়াল হামদু লিল্লাহি ওয়া লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার) টি ১০ বার পাঠ করতে হবে। 
  • তারপর ক্রমানুসারে রুকু হতে দাড়িয়ে গিয়ে “রাব্বানা লাকাল হামদ” পড়ার পরে তাসবীহ পুনরায় এই তাসবীহ (সুবহানাল্লাহি ওয়াল হামদু লিল্লাহি ওয়া লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার) টি ১০ বার পাঠ করতে হবে।
  • তারপর  ক্রমানুসারে সিজদায় যাবে সুবহানা রাব্বি আল-আলা পাঠ করে পুনরায় এই তাসবীহ (সুবহানাল্লাহি ওয়াল হামদু লিল্লাহি ওয়া লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার) টি ১০ বার পাঠ করতে হবে।
  • এরপর প্রথম সিজদা থেকে বসে তাসবীহ পুনরায় এই তাসবীহ (সুবহানাল্লাহি ওয়াল হামদু লিল্লাহি ওয়া লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার) টি ১০ বার পাঠ করতে হবে।
  • তারপর দ্বিতীয়বারের মতো যখন আবার সিজদায় যাবে তখন সুবহানা রাব্বি আল-আলা পাঠ করে পুনরায় এই তাসবীহ (সুবহানাল্লাহি ওয়াল হামদু লিল্লাহি ওয়া লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার) টি ১০ বার পাঠ করতে হবে।
  • অবশেষে একই নিয়মে বাকী তিন রাকাতেও তোমাকে একইভাবে পুনরাবৃত্তি করতে হবে। অর্থাৎ প্রথম রাকাতটি যে রূপে পড়লে ঠিক সেইরূপ বাকী নামাজ গুলোকেও পড়বে।


নোট: যদি তুমি এই তাসবীহ কোন অংশে কম পড়ে থাকো তা যদি তোমার মনে হয় আমি একটা বা দুইটা তাসবীহ কম পড়ে ফেলেছি তাহলে পরে ধাপে পড়ে নিলেই হবে।


আবার যদি তোমার এই তাসবীহ গণনার সময় নাম কয় রাকাত পড়লে তা নিয়ে সমস্যা পড়লে চাইলে আবার প্রথম থেকে পড়তে পারো। তাসবিহ পড়ার সময় আঙুলের কর গণনা না করে আঙুল চেপে চেপে তাসবিহ এর সংখ্যাগুলো মনে রাখেতে পারো।

Post a Comment

Previous Post Next Post